শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০২:২৬ পূর্বাহ্ন
আমার সুরমা ডটকম:
সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার সুরমা ইউনিয়নের হালুয়ারঘাট গ্রামে পূর্ববিরোধের জেরে একটি সন্ত্রাসীচক্র এক দিনমুজুরের স্ত্রীকে প্রাণে মারার উদ্দেশ্য কুড়াঁল দিয়ে কুপিয়ে মাথা, হাত, পেঠে ও কোমড়ের বিভিন্ন স্থানে মারাত্মক আঘাতের ফলে অনেক রক্তাক্ত করা হয়েছে। আহতের নাম তাহমিনা বেগম (২৬)। সে উপজেলার সুরমা ইউনিয়নের হালুয়ারঘাট গ্রামের দিনমজুর মো. হেলাল মিয়ার সহধর্মিনী। ঘটনাটি ঘটেছে গত ৭ জানুয়ারী সকালে হালুয়ারঘাট গ্রামে। ঐ নারীকে তাৎক্ষনিক সুনামগঞ্জ জেলা সদর হাসপাতালের ৪ তলার ২৬নং বেড এ ভর্তি করা হয়। ভর্তির পর থেকেই চিকিৎসার পরিবর্তে ডাক্তারের অসধারচনের শিকার হচ্ছেন ঐ নারী।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, হালুয়ারঘাট গ্রামের মৃত তোয়াজ আলীর ছেলে আইনুদ্দিন, তার ছেলে শরকত আলী ও আরমান আলীর পরিবারের এক নারীর সাথে একবছর পূবের্র বিরোধকে কেন্দ্র করে পিতা-পূত্ররা মিলে ঘটনার দিন দাড়াঁলো অস্ত্র কুড়াঁল ও রড নিয়ে তাহমিনার উপর হামলা চালায়। এ সময় সন্ত্রাসী পিতা পূত্ররা মিলে ঐ নারীর হাতে, মাথায়, পেঠে ও কোমড়ে দাড়াঁলো অস্ত্র দিয়ে একাধিক কোপ দিলে মাথা ফেঁটে যায় ও বাম হাত ভেঙ্গেঁ যায়। এছাড়াও কোমড় এবং পেটের বিভিন্ন স্থানে আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে সদর হাসপাতালে তাকে ভর্তি করা হয়।
এদিকে তার অবস্থা গুরুতর হলেও বুধবার দুপুরে হঠাৎ করে সদর হাসপাতালে কর্মরত অর্থোপেডিক কনসালট্যান্ট ডা. শ্যামল চন্দ্র বর্মণ হামলাকারীদের পক্ষ অবলম্বন করে ঐ গুরুতর নারীকে ছাড়পত্র দিয়ে হাসপাতাল থেকে চলে যাওয়ার নির্দেশ দিলে তার স্বজনরা প্রতিবাদ করেন। কিন্তু ঐ ডাক্তার তাদেরকে ধমক দিয়ে রোগি নিয়ে চলে যেতে বলেন। খবর পেয়ে স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীরা হাসপাতালে ছুটে যান এবং এই গুরুতর দিনমজুরের স্ত্রীকে তার অবস্থা আশংঙ্কাজনক হওয়ার পরেও কেন ছাড়পত্র দিলেন জানতে চাইলে ডা. শ্যামল চন্দ্র বর্মণ আবার ঐ নারীকে ২৬নং বেডে রাখার অনুমতি দেন। এছাড়াও ঐ ডাক্তারের বিরুদ্ধে রোগিদের সাথে অসধাচরনের অভিযোগ করেন ওয়ার্ডে ভর্তিকৃত অন্যান্য রোগীরা।
বৃধবার বিকেলে সরেজমিনে কয়েকজন গণমাধ্যমকর্মীরা আহত তাহমিনাকে দেখতে হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, তাহমিনার পুরো শরীরে দাড়াঁলো অস্ত্রের আঘাতের চিহৃ রয়েছে। সে বিছানা থেকে উঠতে না পারলে ও কর্তব্যরত অর্থোপেডিক কনসালট্যান্ট ডা. শ্যামল চন্দ্র বর্মণ কিভাবে ঐ নারীকে ছাড়পত্র দিয়ে হাসপাতাল থেকে চলে যেতে হুমকি প্রদান করেন। এছাড়াও ঐ ডাক্তারের প্রতিদিন সকাল সাড়ে ৮টা হতে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত নিয়মিত ডিউটি করার কথা থাকলেও তিনি সিলেটের বাসা হতে সময়মতো হাসপাতালে এসে ডিউটিতে যোগদান করতে পারেননি বলেও বিস্তর অভিযোগ রয়েছে।
এ ঘটনায় বুধবার সকালে আহতের স্বামী দিনমজুর মো. হেলাল মিয়া নিজে বাদি হয়ে হামলাকারী হালুয়ারঘাট গ্রামের মৃত তোয়াজ আলীর ছেলে আইনুদ্দিন, তার ছেলে শরকত আলী ও আরমান আলীকে আসামী করে সুনামগঞ্জ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন বলে জানা যায়।
এ ব্যাপারে গুরুতর আহত নারী কান্নাজড়িত কণ্ঠে সাংবাদিকদের জানান, তিনি একজন নিরীহ দিনমজুরের স্ত্রী। কিন্তু হামলাকারীরা স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী হওয়াতে একবছর পূর্বে মহিলা মহিলাদের একটি ঝগড়াকে কেন্দ্র করে উল্লেখিত পিতা পূত্রদ্বয়রা দাড়াঁলো অস্ত্র কুড়াঁল ও লোহার রড নিয়ে আমার শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করেন। তিনি হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর এখানকার কর্তব্যরত ডাক্তার শ্যামল চন্দ্র বর্মণ আমার সাথে খারাপ আচরণ করেন এবং আমাকে কোন কারণ ছাড়াই গুরুতর আহত হওয়ার পরও আমাকে হাসপাতাল থেকে চলে যেতে ছাড়পত্র দেন। আমি এই হামলাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী জানাই।
হামলাকারী মো. আইনুদ্দিনের সাথে মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ না করায় তার বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।
এ ব্যাপারে সুনামগঞ্জ জেলা সদর হাসপাতালে কর্তব্যরত অর্থোপেডিক কনসালট্যান্ট ডা. শ্যামল চন্দ্র্র বর্মণের সাথে মোবাইল ফোনে ঐ নারী গুরুতর আহত হওয়ার পরও তাকে ভালভাবে চিকিৎসাসেবা না দিয়ে ছাড়পত্র দেওয়ার বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি জানান, আমার দৃষ্টিতে সে সুস্থ হয়ে গেছে। কিন্তু পরবর্তীতে কোন একজনের অনুরোধে পূনরায় ঐ নারীকে আবারো হাসপাতাল বেডে থাকার অনুমতি দিয়েছি।
জেলা সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক (আর এমও) ডা. মো. রফিকুল ইসলাম জানান, ঐ নারী যেহেতু গুরুতর আহত, তিনি সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা পাবেন।
এ ব্যাপারে সদর মডেল থানার (ওসি) মো. এজাজুল ইসলাম জানান, থানায় কেহ অভিযোগ করেনি, অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে দোর্ষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।